বিজ্ঞাপন এবং বাণিজ্য | বাংলা ইতিহাস

 

| বিজ্ঞাপন এবং বাণিজ্য | 

বিজ্ঞাপন এবং বাণিজ্য


‘ একলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি । তােমার জন্য গলির কোণে ভাবি আমার মুখ দেখব মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে । '

- শঙ্খ ঘােষ


 ভূমিকাঃ 


এ তাে শুধুকবির বাণী নয় , এ হল আধুনিক যুগের বাস্তব সত্যরূপ । বিজ্ঞাপনের । গােলক ধাঁধায় পড়ে আমরা এখন দিশাহারা । কোন্ দিকে যাবাে , কোষ্টা আসল পথ— এই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে ? আসল - নকলের আলাে - আঁধারি পথে আমরা এগিয়ে চলেছি ।। 


ভাবছি যুগটা বিজ্ঞানের না বিজ্ঞাপনের ! আমরা ক্রমশ ঢেকে যাচ্ছি বিজ্ঞাপনে , আমাদের ।


 বিচার - বুদ্ধির স্বকীয়তা মুখ থুবড়ে পড়ছে বিজ্ঞাপনের ধাক্কায় । কবির ভাষায় — ‘ নিওন । আলােয় পণ্য হলাে যা কিছু আজ ব্যক্তিগত । *


 বিজ্ঞাপন কী  ঃ


 ‘ বিজ্ঞাপন ’ শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থ - হল বিশেষভাবে জ্ঞাপন করা বা জানাননা । আধুনিক বাজার চূড়ান্তভাবে প্রতিযােগিতামূলক বাজার । আর  সহজে পরিচিত করানাের শ্রেষ্ঠ ব্যবস্থা বিজ্ঞাপন । আর এই পরিচিতিকরণের জন্য ।


 প্রতিযােগিতামূলক বাজারে ভােক্তাদের কাছে , জনগণের সান্নিধ্যে কোনাে ভােগ্যপণ্যকে । সংবাদপত্র , রেডিও , টি.ভি. , হাের্ডিং প্রভৃতি প্রচার মাধ্যমের সাহায্য নেওয়া হয় । বর্তমানে । ন ভােগ্যপণ্যই নয় , শিক্ষা ও সামাজিক কাজকর্ম থেকে শুরু করে রাজনৈতিক প্রচার । পর্যন্ত মানবজীবন সম্পৃক্ত সমস্ত কিছুই বিজ্ঞাপন নির্ভর ।। কেবল । 


বিজ্ঞাপনের শ্রেণিবিভাগ  :


 মাধ্যম অনুযায়ী বিজ্ঞাপনকে মােটামুটিভাবে চারটি ভাগে ভাগ করা যায় । 

ক ) বেতার বা দূরদর্শন মারফৎ প্রদর্শিত বিজ্ঞাপন , 

খ ) সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন , 

গ ) পথেঘাটে পােস্টারিং দেওয়াল লিখন মারফৎ প্রচারিত বিজ্ঞাপন ,

 ঘ ) পথসভা বা জনসভার মাধ্যমে বিজ্ঞাপন । অন্যদিকে সত্ত্বঅনুযায়ী বিজ্ঞাপনকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় সরকারি বিজ্ঞাপন এবং বেসরকারি বিজ্ঞাপন ।


 * বিজ্ঞাপনের বিষয় ও আধুনিক যন্ত্রযুগে আমরা বড় বেশি বিজ্ঞাপিত । বিজ্ঞাপনের বিষয় আজ বহুধাব্যাপৃত । জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানবজীবন সম্পৃক্ত সমস্ত কিছুই বিজ্ঞাপনের বিষয় । চাল , আটা , ঘি , লবণ , ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্য ; কীটনাশক ওষুধ , সার , বীজ ইত্যাদি উপকরণ ; বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রী , মােটর সাইকেল , স্কুটার প্রভৃতি ব্যক্তিগত যানবাহন , পােষাক পরিচ্ছদ , বইপত্র , সিনেমা , থিয়েটার , বিবাহযােগ্য পাত্র - পাত্রী , সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মখালি , ওষুধপত্র , প্রাক নির্বাচনী রাজনৈতিক প্রচার ইত্যাদি সবই বিজ্ঞাপনের বিষয়ীভূত । *


 বিজ্ঞাপনের প্রয়ােজনীয়তা ও বর্তমান প্রচার সর্বস্বতার যুগে বিজ্ঞাপন ছাড়া বাণিজ্যের কথা চিন্তাই করা যায় না । আজকের চূড়ান্ত প্রতিযােগিতামূলক বাজারে যে সকল প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত দ্রব্যাদির গুণাগুণ বিশেষভাবে প্রচার করে সর্বাধিক পরিমাণ ক্রেতার কাছে ক্রয়যােগ্য করে তুলতে পারে সেই সকল প্রতিষ্ঠানই টিকে থাকে । কেবল গুণাগুণই । নয় , ক্রেতা সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার কথা মাথায় রেখে তুলনামূলক মূল্যমান সম্পর্কেও তাদের বিশেষভাবে অবহিত করতে হয় ।


 এইভাবে একদিকে গুণগত উৎকর্ষতা , আর । তুলনামূলক মূল্যমান সম্পর্কে মানুষকে বিশেষভাবে অবহিত করে তােলাই অন্যদিকে বিজ্ঞাপনের কাজ ।


 * বিগনৱ সুফল ও কুফলঃ


 আরও অনেক কিছুর মত বিজ্ঞাপনেরও ভালাে এক মথ দুটি দিক আছে । এই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে একদিকে অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে , রক্তদানের । উপযােগিতা সম্পর্কে পরিবার পরিকল্পনা , সাক্ষরতা এসার প্রভৃতি বিষয়ে সামাজিক শিক দান সম্ভব হয় ।


 বহু নতুন নতুন জিনিস ও তার দাম এই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই জানা সম্ভ হয় । এই বিজ্ঞাপনের জন্যই আমরা বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্র - পত্রিকা অনেক কম পয়সায় নিতে পারছি , বিনা বায়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্রীড়াপ্রতিযােগিতা , সিনেমা , নাটক ইত্যাদি ঘরে বসে দুরদর্শনের পর্দায় দেখতে পাচ্ছি ।


 অন্যদিকে বিজ্ঞাপনের নেতিবাচক দিকটিও কােনাে অংশে কম উপেক্ষণীয় নয় । বিভিন্ন কোম্পানির উৎপাদিত একই প্রকার দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ক্রেতাদের বিভ্রান্ত করে তােলে । একে ‘ বিজ্ঞাপন বিভ্রাট ’ বলা যায় । বিজ্ঞাপনের মচিক্যে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে প্রায়শই নিকৃষ্ট মানের দ্রব্য কিনে বসে ।


 বিজ্ঞাপনের জন্য যে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয় সেই অর্থ কোম্পানিগুলি উৎপাদিত দ্রব্যের । উৎপাদন ব্যয়ের মধ্যে ধরে নেয়।ফলে দ্রব্যের দাম বেড়ে যায় এবং পরােক্ষে দ্রব্যের এই বিজ্ঞাপন ব্যয়ের বােঝা গিয়ে পড়ে সাধারণ ক্রেতাদের উপর । 


উপসংহার : 


বর্তমান সর্বব্যাপী বিজ্ঞানের যুগে বিজ্ঞাপনের প্রাসঙ্গিক কোনাে মইে অধীর রা যায় না । তবে বিজ্ঞাপনকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে । কেবল অন্যায় লােভ দেখিয়ে ভ্রান্ত বিজ্ঞাপনের দ্বারা ক্রেতাদের আকর্ষণ করা নয় , উৎপাদিত দ্রব্যের প্রকৃত গুণমান বিজ্ঞাপনের দ্বারা তুলে ধরতে হবে । 


এছাড়া বিজ্ঞাপনকে | আমাদের মা , সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অনুসারী করে তুলতে হবে । সর্বোপরি বিজ্ঞাপনকে সরকারি নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনতে হবে । এইভাবে বিজ্ঞাপনকে যদি সঠিকপথে পরিচালনা করা যায় তবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এই বিজ্ঞাপন এক ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করবে এবং বিজ্ঞাপন ফিরে পাবে তার প্রকৃত প্রাসঙ্গিকতা ।




 ৬ নম্বর হিসাবে পাবে । 

১ । বিজ্ঞাপন কাকে বলে ? 

২ ।  বিজ্ঞাপনের শ্রেণি বিভাগ করাে । 

৩ ।   বিজ্ঞাপনের প্রয়ােজনীয়তা কেন ? বিজ্ঞাপনের সুফল ও কুফল আললাচনা করাে ।



Post a Comment

0 Comments