প্রবন্ধ রচনা বাংলার উৎসব / বাংলার উৎসব রচনা লেখ।

 বাংলার উৎসব  


বাংলার উৎসব


ভূমিকাঃ বারাে মাসে তেরাে পার্বণ ’ – এই নিয়েই উৎসব - প্রাণ বাঙালি । কৃষিমাতৃক বাংলাদেশ ও তার মেঠো মানুষেরা আবর্তিত ঋতুচক্রে এবং তৎসংপৃক্ত নানা ছােটো বড়াে উৎসব নিয়ে গড়ে তুলেছে নিজস্ব এক আনন্দভুবন । এই পালা - পার্বণ - উৎসবের মধ্য দিয়েই তারা ভুলতে চেয়েছে নৈমিত্তিক দিনযাপনের ক্লান্তিকর একঘেয়েমিতাকে । রূপসী বাংলার অন্যতম ভূষণ এই আনন্দলহরী উৎসবমালা।কতশত কবির প্রেরণা , কত শিল্পীর ভাস্কর্য প্রতিমা বহু ধর্মও বর্ণেরঞ্জিত উৎসবময়ী বাংলা । বঙ্গজননীর অন্তর্নিহিত সৌন্দর্যের প্রাচুর্যে মাতােয়ারা বাঙালি আপন প্রাণের স্বতস্ফূর্ত উচ্ছাসে মেতে ওঠে নিত্য - নব উৎসব রচনায় । কোনাে সাম্রাজ্যবাদী নিষ্পেষণ কিংবা প্রাকৃতিক রােষচক্ষু কেড়ে নিতে পারেনি বাঙালির এই প্রাণজ উচ্ছ্বাস । আপন প্রাণ - প্রাচুর্যে যাবতীয় প্রতিকূলতাকে জয় করে যুগ যুগ ধরে আপন উৎসব চেতনাকে রেখেছে অটুট । বরং সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে তার চেহারা ও সাজ - সজ্জায় ঘটেছে যুগােপযােগী পরিবর্তন । কবির ভাষায় — এত ভঙ্গ বঙ্গদেশ , তবুরঙ্গে ভরা । কে বাঁচায়,কে বাঁচে কে বাঁচায় | কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্পের বিষয়বস্তু

 উৎসব কী ও কেন ? 

উৎসব হল মানুষের অবসর মুহূর্তের আনন্দঘন প্রকাশ । বহু মানুষের একত্র সমাবেশ ঘটে এই উৎসবে । প্রাত্যহিক দিন যাপনের গ্লানি কিছুক্ষণের জন্য হলেও ভােলা সম্ভব হয় উৎসবের রােশনাইয়ে । উৎসবের দিনটি আর পাঁচটি দিনের তুলনায় সম্পূর্ণ আলাদা । আমাদের আচার - আচরণ , পােষাক - পরিচ্ছদ , সাজ - সজ্জা সমস্ত কিছুই অন্যরকম হয় এই উৎসবের দিনে । অন্য দিন যারা স্বাগত নয় , উৎসবের দিনে তাদের জন্যও দ্বারঅবারিত । আর এই কারণেই বাঙালি তার নিত্য - নৈমিত্তিকঅভাব - অনটন , অপমান - লাঞ্ছনার মধ্যেও সভ্যতার উষালগ্ন থেকে এই উৎসবের ধারাটি চির - প্রবাহমান । রেখেছে । দোল , ঝুলন , রথ , চড়ক , দুর্গাপূজা ইত্যাদি বারাে মাসে তেরাে পার্বণ বাঙালির সেই অনন্তপ্রবাহী জীবন ছন্দেরই এক আনন্দঘন রস প্রকাশ ।

🔥বাংলার উৎসব রচনা

 উৎসবের প্রকারভেদ :  বাঙালির প্রচলিত উৎসবগুলিকে চরিত্র ও প্রকৃতি বিচারে মােট চারভাগে বিভাজিত করা যায় ধর্মীয় উৎসব , ঋতু উৎসব , সামাজিক উৎসব এবং জাতীয় উৎসব । উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা অলৌকিক গল্প


 বাঙালির উৎসব চেতনার মূলে রয়েছে ধর্ম এবং তৎকেন্দ্রিক পুজা - পার্বণ , আচার - আচরণ , ক্রিয়াকর্ম ইত্যাদি । ঙালি ধর্মভীরু জাতি । তাই এই ধর্মকে নিয়ে বাঙালির জীবনে গড়ে উঠেছে অসংখ্য উৎসব । সিদ্ধিদাতা গণেশের পূজা দিয়ে নতুন বছরের শুভ যাত্রারম্ভ । দোকানে দোকানে ভােলা হয় নতুন খাতা । নতুন সাজে সেজে ওঠে

গ্রাম - গঞ্জ - শহর - বাংলার বিপণি কেন্দ্রগুলি এরপর পর্যায়ক্রমে আসে — দশহরা , রথযাত্রা রাখি - পুর্ণিমা , ঝুলনযাত্রা , মনসা পুজা , বিশ্বকর্মা পুজা এবং বাঙালির উৎসবসায়ী শারদী উৎসব - দুর্গাপূজা । নতুন সাজে সেজে ওঠে সমস্ত বাঙালি । ঘরে ঘরে কেবল মিলনের সমারােহ । বাস্তবিকই এই শারদোৎসব মুলতঃ এক মহান মিলনােৎসবের রূপ নেয় , মাতৃ আরাধনার আনন্দে বাঙালি ভুলে যায় জাতি - ধর্ম - বর্ণ - ধনী - দরিদ্রের সমস্ত ভেদাভেদ এরমধ্যে আপামর বাঙালি খুঁজে পায় এক পরম আত্মতৃপ্তি।ঠিক পরের পূর্ণিমায় বাঙালির ঘরে ঘরে চলে লক্ষ্মীর আবাহন । পরবর্তী অমাবস্যায় বাঙালি মেতে ওঠে দীপান্বিতা উৎসবে — আলাের নেশায় , আলাের খেলায় । এরপর কার্তিক পূজা ও জগদ্ধাত্রী পূজার শেষে মাঘ মাসের শুক্লা তিথিতে শিশিরস্নাত সকালে আমরা বাগদেবীর আরাধনায় মেতে উঠি । অন্নপূর্ণা পূজার মধ্য দিয়ে বছর শেষ হয় । এছাড়াও রয়েছে অসংখ্য ছােটো - বড়াে লৌকিক উৎসব । যেমন- গাজন , চড়ক , রাস , ভাদু ও টুসু পরব ইত্যাদি । এর পাশাপাশি মুসলমান সমাজের মহরম , ইদ - ফেতর , শবে - বরাত , বৌদ্ধদের বুদ্ধ - পূর্ণিমা , খ্রিস্টানদের বড়দিন , গুড ফ্রাইডে ইত্যাদিও যুগ যুগ ধরে বাঙালির উৎসব চেতনার সঙ্গে সমীকৃত হয়ে গিয়েছে । এই উৎসবগুলিই যাবতীয় ধর্মীয় ভেদাভেদ দূর করে সকলকে একসুতােয় গেঁথে রেখেছে । মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে মানবতাবাদ 


 উৎসবের সেকাল ও একাল  ঃ যুগ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে উৎসবের আয়ােজনের ক্ষেত্রেও ঘটে গিয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন । প্রাচীনকালে উৎসবের কেন্দ্র ছিল রাজবাড়ি জমিদারবাড়ি কিংবা গ্রামের নাটমন্দির । উৎসবের প্রায় মাসখানেক আগে থেকেই শুরু । হয়ে যেত আয়ােজন । নানারকম পসরার মেলা বসত । মণিহারী থেকে শুরু করে হাঁড়ি , কড়াই কোনাে কিছুই বাদ যেত না । যাত্রাগান , কবিগান ইত্যাদির আয়ােজন করা হত । উৎসব উপলক্ষে জমিদার বা রাজারা গরিব প্রজাদের অকাতরে দান - ধ্যান করতেন । এককথায় উৎসবের আয়ােজনে রাজা - প্রজা সকলের এক মহামিলন ঘটত । জাতি - ধর্ম - বর্ণ - ধনী - দরিদ্র ভেদাভেদ ভুলে কিছু সময়ের জন্য হলেও মানুষজন মেতে উঠত এক অপার্থিব আনন্দে ।। 

আজ যে কোনাে উৎসবেরইবাহ চটকদারিত্বের বিষয়টি বড়াে হয়ে ওঠে । অত্য গ্রামের কোনাের মেলা বা উৎসবেও আজতাই বৈদ্যুতিক নাগরদোলা , এরােপ্লেন , ম্যাজি শশা , মিনি চিড়িয়াখানা , সিনেমা প্রদর্শনী , পুষ্প প্রদর্শনী ইত্যাদির দৌরাত্ম । পসরাগুলিও নানা আধুনিক জিনিস পত্রে সাজানাে । আজ বাঙালি নিজস্ব স্টাইলে কিছু উৎসব তৈরি করে নিয়েছে , যেগুলি সম্পূর্ণভাবে আধুনিক বাঙালির মননজাত । যেমন- বইমেলা পুষ্পমেলা , শিশুমেলা , চিত্রপ্রদর্শনী ইত্যদি । বিশেষতঃ বইমেলা তাে আজ বাঙালির নাগরিবজীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসবে পরিণত হয়েছে । এভাবেই বাঙালির উৎসব বাঙালির মনন পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকেও সুন্দরভাবে অভিযােজিত করে নিয়েছে ।


 উপসংহার : আজ সে বাংলা নেই , নেই সেই বাঙালি ; কিন্তু আছে বাঙালির নিজস্ব উৎসবগুলি । অবশ্যই নবরূপে ও নবসাজে । কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তিত আঙ্গিকেও নামে।বাঙালির উৎসবের ধর্মীয় মােড়কটি আজ অনেক ফিকে হয়ে গিয়েছে । উৎসবের জৌলুস বেড়েছে অনেকাংশে , বেড়েছেবাণিজ্যিক প্রবণতা , কিন্তু হারিয়ে গিয়েছে উৎসবের সেই প্রাচীন প্রাণস্পন্দন।নাগরিক সভ্যতার বিষাক্ত নিঃশ্বাসে এবং পাশ্চাত্য সভ্যতার ক্রম আগ্রাসনে বাঙালির উৎসব - আত্মা আজ মুমূর্য । বাইরে ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্য বাড়লেও অন্তরে ঐশ্বর্য আজভুলুণ্ঠিত।এটা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।বাইরে ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্য বাড়লেও অন্তরে ঐশ্বর্য আজভূলুণ্ঠিত।এটা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই । তবে এই আন্তর - ঐশ্বর্যের দিকটি বাদ দিলে বাঙালির উৎসব প্রচার ও বিজ্ঞানের আলােয় তার জীবনে আজ এক নতুন দ্যোতনায় আসীন । হাজারাে সমস্যার মাঝেও বাঙালীকে বাঙালি ’ করে রেখেছে । বাঙালির এই উৎসবপ্রিয়তা ।


উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা অলৌকিক গল্প




Post a Comment

0 Comments